চলমান অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি, যা এডিপি নামে পরিচিত, তার বাস্তবায়নে দেখা গেছে এক হতাশাজনক চিত্র। এই সময়ে আটটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্দের মাত্র ৫ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে। পূর্বের বছরের তুলনায় এই অবস্থা আরও বেশি উদ্বেগজনক, যেখানে অধিকাংশ প্রকল্পের অগ্রগতি ক্ষীণ।
বিশেষ করে সংসদবিষয়ক সচিবালয় একটুকুও খরচ করতে পারেনি, যেখানে একটি প্রকল্পে ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ ছিল। এই ক্ষেত্রে কোনও টাকা ব্যয় হয়নি। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যখাতেও পরিস্থিতি তেমন বিচ্ছিন্ন নয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ১৫টি প্রকল্পে মোট ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একইভাবে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকার বরাদ্দে মাত্র ৮৬ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে।
অ্যামইডি সূত্র জানায়, বরাদ্দের অনুপাত হিসেবে এই মন্ত্রণালয়গুলো যথাক্রমে মাত্র ২.৩১%, ২.১২%, ৩.৩০%, ২.৪৩% ও ১.২৫% অর্থই ব্যয় করেছে। এর ফলে, সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার এই অর্থবছরে মাত্র ১১.৭৫% দাঁড়িয়েছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই সময়ে মোট ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কম।
উল্লেখ্য, এই অর্থবছরে সরকারি বরাদ্দ করা হয়েছে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এর আওতায় বর্তমানে ১ হাজার ১৯৮টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে, প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের এই ধীরপ্রগতির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠছে।
অতীতে, এই সময়ের মধ্যে দ্রুত গতিতে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। যেমন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এর হার ছিল ১৮.৬১%, ২০২২-২৩ এ এটি ছিল ১৮.৪১%, এবং ২০২৩-২৪ এ ছিল ১৭.০৬%। এই ধারায় দেখা গেছে যে গত কয়েক বছরে এডিপির বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনোযোগ হারাচ্ছে, যা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এদিকে, নভেম্বরে মাসিক ভিত্তিতে এই উন্নয়ন কার্যক্রমের হার অন্য কোন বছরের তুলনায় কম। নভেম্বর মাসে মোট ৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা বরাদ্দের মাত্র ৩.৪২%, অথচ গত বছর সে সময় ছিল ১২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্পষ্ট চ্যালেঞ্জের সংকেত দিচ্ছে।






