বলিউডের একজন প্রভাবশালী ও প্রথম সারির অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন আজ সাফল্যের শিখরে অবস্থান করলেও তার ক্যারিয়ার শুরু সহজ ছিল না। সাধারণ অভিনেত্রীরা যেখানে নিজেদের আরো সুন্দর করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন, সেখানে কৃতি একসময় অদ্ভুত এক কারণে কাজ থেকে বাদ পড়েছিলেন। তার অপরাধ ছিল তিনি ‘অতিরিক্ত সুন্দর’! এই স্ট্রাগল পিরিয়ডে অনেক নির্মাতা তাকে মুখের ওপর বলে যান যে, পর্দায় কোনো চরিত্রকে বাস্তবসম্মত দেখাতে হলে চেহারায় কিছুটা অসঙ্গতি থাকা প্রয়োজন, যা কৃতির মধ্যে নেই। এই নেতিবাচক মন্তব্য শুনে তিনি অনেক সময় হতাশা অনুভব করেছিলেন এবং চোখের জল ফেলেছেন। তবে সেই কঠিন সময়েও কিছু মানুষ তার ওপর ভরসা রেখেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত তার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
দিল্লিতে জন্ম নেয়া কৃতি প্রকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু মনের গভীরে বড় পর্দায় নিজেকে দেখার যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণের জন্য তিনি ছিলেন অটল। অবশেষে ২০১৪ সালে ‘হিরোপন্তি’ সিনেমার মাধ্যমে টাইগার শ্রফের বিপরীতে বলিউডে তার অভিষেক হয়। প্রথম ছবিতেই আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি আর সাবলীল অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শকদের মন জয় করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ‘বেরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’ এবং ‘হাউসফুল ৪’ जैसी বৈচিত্র্যময় সিনেমায় অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি কেবল গ্ল্যামারাস বাণিজ্যিক নায়িকা নন, বরং যেকোনো চরিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করার ক্ষমতা তার রয়েছে।
কৃতির ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় মাইলফলক হিসেবে ধরা হয় ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মিমি’ সিনেমাটি। এতে একজন সারোগেট মায়ের চরিত্রে তার সংবেদনশীল ও শক্তিশালী অভিনয় দর্শক ও সমালোচকের হৃদয় জয় করে নেয়। এই অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, যা তাকে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের মধ্যে স্থান দেয়। এর আগে ২০১৫ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘দিলওয়ালে’ ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। বর্তমানে তার মোট সম্পদ প্রায় ৮২ কোটি রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১০ কোটি টাকা, যেটা মূলত তার বিজ্ঞাপনচুক্তি থেকে আসে।
আশাবাদী এই সফলতা অর্জনের ধারাবাহিকতায় এখন তিনি দক্ষিণী সুপারস্টার ধানুশের বিপরীতে ‘তেরে ইশ্ক মে’ সিনেমার জন্য ব্যস্ত। একসময়ে যাদের ‘বেশি সুন্দর’ বলে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, আজ নিজ মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও ধৈর্য্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সৌন্দর্য নয়— একজন শিল্পীর মূল শক্তি হলো তার অভিনয় প্রতিভা এবং আত্মবিশ্বাস। বলিউডের অন্যতম বহুমুখী এই অভিনেত্রীর এই গল্প নতুন প্রজন্মের হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।






