জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতা আরও গভীর হয়ে উঠেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারার পদত্যাগের পরপরই, এবার তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীনও দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ ও আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছেন।
ডা. তাজনূভা জাবীন তার পদত্যাগের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দলটির নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলছেন, এই জোটের জন্য সম্পূর্ণ পরিকল্পিত দুর্গতি ঘটানো হয়েছে, যা কেবল রাজনৈতিক কৌশল নয়, এটি ছিল একটি সুপ্রণিধানিত ছক। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, এনসিপি ১২৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও, গোপনে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মাত্র ৩০টি আসনে, যার ফলে বাকিদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে—বিশেষ করে তখন, যখন অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করে ডা. তাজনূভা উল্লেখ করেন, “এক শীর্ষ নেতা অন্য শীর্ষ নেতাকে মাইনাস করার যে রাজনীতি চালাচ্ছেন, তা অত্যন্ত ভীতিকর।” তিনি অভিযোগ করে বলেন, এনসিপি যে নতুন রাজনৈতিক স্বপ্ন দেখছিল, তার বিপরীতে শীর্ষ নেতারা ব্যক্তিগত স্বার্থে সেই আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেখানে চরমোনাই পীরের দল ৭০টি আসন পান, সেখানে নার্ভশূন্য হয়ে মাত্র ৩০টি আসনে কেন্দ্রীভূত হয়েছে এনসিপি। এই পরিস্থিতি তাঁকে জুলাইয়ের রাজনীতির বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে মনে হয়।
অতীতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে দেখে এখন তাঁকে বহিরাগত বা ‘অরাজনৈতিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডা. তাজনূভা। তিনি বলতে পারেন, যারা লাখ লাখ ফলোয়ারসহ নেতারা থাকেন, তারা বারবার নীতিমালা ভেঙে গেলেও কোনো জবাবদিহিতা আশেপাশে থাকতে পারছেন না। Conversely, তিনি বলেন, যারা আদর্শে থাকতে চান, তাদের ‘আবেগী’ বলে অপমান করা হচ্ছে। তাঁর মতে, এনসিপি এখন সেই বিপ্লবী স্পিরিট হারিয়ে ফেলেছে; বরং জুলাইয়ের অগণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানকে কেবল ক্ষমতা অর্জনের জন্য ব্যবহার করছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে, তিনি বলেন, আজ তার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও নেতা-কর্মীদের ভণ্ডামির কারণে তিনি তা দিচ্ছেন না। তার মা, চট্টগ্রাম থেকে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে তাকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। তিনি এই অপসারণপূর্ণ পরিস্থিতিতে, তার নির্বাচনী তহবিলে যারা দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তা দ্রুতই সম্পন্ন করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
অবশেষে, ডা. তাজনূভা জাবীন উল্লেখ করেছেন, যদিও তিনি এনসিপি থেকে বিদায় নিলেন, তবে জুলাই মাসের স্বপ্ন এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য তার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এই পদত্যাগ এবং জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে দলের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের শুরুর মাধ্যমে, বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির ভবিষ্যৎ ও আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল জন্য তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত, নতুন রাজনৈতিক স্বপ্নে ভরা এই দলের মধ্যে এখন দৃশ্যমান একটি বড় ফাটল।






