মেঘনা নদীতে অবৈধ পদ্ধতিতে জাল ও চাই (ফাঁদ) ব্যবহার করে পাঙ্গাসের পোনা নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ মাছের উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলছে। এই অসাধু কর্মকাণ্ডে স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে, তবে কার্যত মৎস্য বিভাগের নীরবতা ও প্রশাসনিক উদাসীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। মাঝে মাঝে কিছু অভিযান চালানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়, আর অসাধু জেলেরা প্রভাব খাটিয়ে আবারো জাল ও চাই ব্যবহার শুরু করে দিচ্ছে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শেষদিকে ভোলার বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, দৌলতখান ও মনপুরাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ এই জাল ও চাই ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ পাঙ্গাসের পোনা নিধন হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব পোনা আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে গ্রামে ও শহরে বাজারজাত হচ্ছে, যেখানে সাধারণ মানুষ আমদানি ও বিক্রির জন্য পাচ্ছেন না বড় মাছ, বরং পোনা বিক্রি হচ্ছে। এই নিধনের ফলে পাঙ্গাসসহ অন্যান্য মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা জেলেদের জীবন-জীবিকা ও দেশের খাদ্য সংস্থানকে সংকটে ফেলতে পারে। মৎস্য আইনের অনুযায়ী, ১২ ইঞ্চি (৩০ সেন্টিমিটার) এর নিচে পাঙ্গাস ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভোলার উপকূলে এই পোনা শিকার বেশি হয়। জেলে কালাম মাঝি বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই অবৈধ কাজে জড়িত থাকায় সাধারণ জেলেরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। তিনি মনে করেন, যদি নদী থেকে অবৈধ চাই ও জাল ধ্বংস করা যায়, তবে ভবিষ্যতে বড় পাঙ্গাস পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই অবৈধ শিকারে পাঙ্গাসের বাজার সংকটের পাশাপাশি, বড় মাছের অভাবে জেলেদের জীবন আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। সাংবাদিক রিয়াজ ফরাজী বলেন, মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ উপায়ে পাঙ্গাসের পোনা নিধন অব্যাহত থাকলেও, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ এই ধরণের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ। এই অবৈধ শিকার জৈব প্রক্রিয়াকে বিপর্যস্ত করে ফেলছে, যা মূলত পাঙ্গাস ও অন্যান্য মাছের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বড় মাছের চাহিদা থাকলেও পোনা নিধনের কারণে মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে, ফলে জেলেরা ও ভোক্তাদের জন্য বড় মাছের অভাব দেখা দিচ্ছে। উল্লেখ্য, মৎস্য আইনের অনুসারে, এই পোনার শিকার সম্পূর্ণ বেআইনি। তবে স্থানীয় জেলেরা দাবি করেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই অবৈধ শিকারকে চালিয়ে যাচ্ছেন, ফলে সাধারণ জেলেরা সংগঠিতভাবে এই বাধা কাটানোর সাহস পাই না। এদিকে, মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা পাঙ্গাসের পোনা রক্ষা করার জন্য নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। গত নভেম্বরে একটি অভিযানে একজন জেলেকে পোনা শিকার করার দায়ে দণ্ডিত করা হয়েছে। আরও জানানো হয়, ডিসেম্বরের শেষ দিনগুলোতে তজুমদ্দিন উপজেলায় কোস্ট গার্ড ও মৎস্য বিভাগের যৌথ অভিযান চালিয়ে অসাধু কিছু জেলেকে আটক করে, তাদের কাছ থেকে দাবী করা হয় জাল, চাই ও পাঙ্গাসের পোনা। অপপ্রচার ও অবৈধ শিকার বন্ধের জন্য দাবী জানিয়েছেন উপকূলীয় সচেতন মহল, যারা বলছেন, কেবল কিছু চাই ও জাল জব্দ করে বা নদীতে নদীতে পোনা অবমুক্ত করে এই মহোৎসব বন্ধ হবে না। যথাযথ নজরদারি ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিলে এই শান্তির দাবি সম্ভব।






