ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে জানিয়েছেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি এখনো বিদ্যমান। টেলিগ্রামে কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী কার্যক্রম শুরু করেছে। সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সকাল ভোরে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী সারা দেশে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে এবং সামাজিক মাধ্যমে জানানো হয়, রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এএফপি’র সাক্ষাৎকারে স্থানীয় গভীর শব্দে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে, যেখানে কয়েকটি বিস্ফোরণের সঙ্গে তীব্র আলো দেখা গেছে এবং আকাশে কমলা রঙের আলো ফুটে উঠতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রোববার তিনি ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে দু메কিং সংলাপের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ও পরিস্থিতি শান্ত করতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চুক্তি hampir প্রস্তুত হয়েছে এবং নতুন বছরের আগে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ট্রাম্পও বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রেরই মূল চালিকাশক্তি থাকছে।
বৈঠকের আগে শনিবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ফোনে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। এ সময় উভয় নেতা সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারাও উপস্থিত থাকবেন এই আলোচনায়।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ফ্রান্স ও পোল্যান্ডের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো কিছু সাময়িক ব্যবস্থা নিয়েছে। পোল্যান্ড তাদের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের জেশনভ ও লুব্লিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনী আকাশে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে রেখেছে। রাশিয়া এইসব হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
বৈঠকের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলছে, জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ও শান্তি পরিকল্পনা ২০ দফার মোট ৯০ শতাংশই শেষ হয়েছে। সেখানে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ স্থগিতের পাশাপাশি, ইউক্রেনের সেনাদের প্রত্যাহার ও নিরস্ত্রীকরণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অপর দিকে, রাশিয়া দাবি করছে, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে যদি কিছু ভূখণ্ড বিনিময় হয় তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর জন্য রাজি হতে পারেন। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে জোর দিয়ে বলেছেন, দনবাস অঞ্চল রুশ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং এর পরিবর্তন হবে না। ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পুতিন সাধারণত বলে এসেছেন, রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন অন্য অঞ্চলগুলোর অদলবদল বা হস্তান্তর সম্ভাবনাকে তিনি উড়িয়ে দেননি।
প্রসঙ্গত, জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দনবাসের অবশিষ্ট অংশ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি। অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যত নিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষমতাগুলোর উদ্যোগ ও চাপ অব্যাহত রয়েছে, যাতে যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়। এই পরিস্থিতিতে নতুন বছরের আশায় উৎকণ্ঠা বাড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।






