আগামী তিন বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের ভিতরে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা এবং পদত্যাগের মিছিল ব্যাপক আকার ধারণ করছে। এই পরিস্থিতিতে বড় ধরনের বিভক্তির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, ইতোমধ্যে জামায়াতের সঙ্গে জোট বিরোধী প্রায় ৩০ জন দলীয় নেতাকর্মী জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এই চিঠির মাধ্যমে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, জামায়াতের সঙ্গে বিষয়টি মানা যায় না। এর পর থেকেই জোটের বিরোধিতা করে দলটি ব্যাপক প্রচারণা চালানো শুরু করে। ফলস্বরূপ, বেশ কিছু নেতাই দল থেকে পদত্যাগ করলেন।
গত রবিবার, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন দল ছেড়ে দেন। তাকে ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়নও দেয়া হয়েছিল। এ দিনই অন্য এক যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিনও নির্বাচন থেকে প্রস্থান ঘোষণা করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা গণ অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে গড়া দল হিসেবে ধারণা করতাম যে, এনসিপি ছিল মধ্যপন্থী রাজনৈতিক ব্যাকরণে দাঁড়ানো দল। তবে এখন জানা গেল, তারা জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে। এই সিদ্ধান্তের পর আমি মনে করলাম, আমি এই নির্বাচনে অংশ নেব না। আমি বিশ্বাস করি, দলের স্বতন্ত্র শক্তি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আর দেশের মানুষের জন্য দায়বদ্ধতা আমার কাছে প্রথম। আমি নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করছি।’
শুক্রবার দল থেকে সরে দাঁড়ান দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। এর আগে, বৃহস্পতিবার, জামায়াতবিরোধী নেতৃস্থানীয় নেতা মীর আরশাদুল হক দল ছেড়ে দেন। তিনি জামায়াতবিরোধী অংশের একজন পরিচিত নেতা ছিলেন।
অন্যদিকে, আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির এই সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন এবং দেশের তরুণ শক্তির জন্য অবশ্যই হতাশাজনক। তারা বাস্তবতা বুঝতে পেরেছেন, এনসিপি এখন জামায়াতের সঙ্গে সরাসরি জোটবন্দী হয়ে পড়ছে, যা তারুণ্যের রাজনীতির জন্য অশুভ সংকেত। এই সিদ্ধান্তের ফলে দলটি গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের আত্মবিরোধে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবেশী, আমি তখনই বলেছি, যখন জোটের ঘোষণা হবে, আমি পদত্যাগ করব। সকলের সামনে সব কথা প্রকাশ করব। আমরা আশা করেছিলাম, দলটি সঠিক পথে ফিরবে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, সেটি সম্ভব নয়।’
নেতাদের বক্তব্যে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা চলছিল। এই সপ্তাহে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।
আরেক বিশ্লেষক বলেন, এই জোটটি হয়তো জামায়াতের লাভ বাড়াতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদিভাবে এনসিপির ভিতরে আরও বড় বিভাজন সৃষ্টি হবে। রাজনৈতিক দৃষ্টিতে, এই সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ আত্মঘাতী বলছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের অতীত ভূমিকা অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়, তাহলে এনসিপির জন্য এই জোট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারা মধ্যপন্থী থাকলেও, এ ধরনের সমঝোতা তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকে খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। রাজনীতির মাঠে এই পরিস্থিতি এখন তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।






