অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রমের পর বহুল আলোচিত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এরইমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর উভয় পাশে সব সড়কপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। অন্য কাজগুলোও দৃঢ়ভাবে এগুচ্ছে। সরকার আশাবাদী, এই বৃহৎ অবকাঠামো দেশের জিডিপি অন্তত ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৬ শতাংশ। গুণগত মান নিশ্চিত করে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা যাত্রীদের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দিতে কঠোর পরিশ্রম করছি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অঙ্গীকার পূরণ হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কর্মকর্তারা জানান, পাঁচটি স্প্যান স্থাপনের পর ৭৫০ মিটার সেতু দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এটাকে দেখা হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন হিসেবে; যা সত্যি হতে যাচ্ছে।
২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যান স্থাপন করা হয়। তৃতীয় স্প্যানটি স্থাপন করা হয় ১১ মার্চ। চতুর্থ ও পঞ্চম স্প্যান স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৩ মে ও ২৯ জুন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুটিতে মোট ৪১টি স্প্যান থাকবে, এর প্রতিটির দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ৪২টি পিলারে মোট ৪১টি স্প্যান স্থাপন করা হবে। দেশের বৃহত্তম এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এর কাজ সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশিদের পাশাপাশি এই প্রকল্পে কাজ করছেন চীনা, আমেরিকান, ব্রিটিশ, ভারতীয় ও জাপানি নাগরিকরা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ২৯ জুন ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শনকালে বলেন, ‘যাত্রীদের জন্য সেতুটি খুলে দিতে একের পর এক স্প্যান বসানো হচ্ছে।’
প্রথমবারের মতো সরকার পদ্মা সেতুর মতো একটি বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়ী নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘আমাদের নিজস্ব তহবিলে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের মতো একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন স্পষ্টতই বিশ্বব্যাপী আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।’
পদ্মা সেতু শুধু ঢাকার সঙ্গেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করবে না; বরং এটি দেশের অর্থনীতির চিত্রই বদলে দেবে। পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চল দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়ে উঠবে।