সাম্প্রতিক সময়ের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। মেজর সিনহার মৃত্যু নিয়ে যেখানে ঘোট পেকে গেছে এবং দেশের সাধারণ মানুষ উৎকন্ঠিত সেখানে হঠাৎ করেই আওয়ামীলীগের- এক এজেন্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। মেজর সিনহার মৃত্যু নিয়ে দেশ যখন স্তম্ভিত এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন চারিদিক সরগরম তখন হঠাৎ করেই েই রাষ্ট্র ধর্মের ইস্যুটি আনার মানে হচ্ছে আওয়ামীলীগ আসলে ধর্ম নিয়ে খেলতে চাইছে বরাবরের মত। আসলে আওয়ামীলীগের কাছে ধর্ম হচ্ছে রাজনীতির একটি বড় মাধ্যম যেটি দিয়ে তারা সারাটিজীবন এই দেশের মানুষকে দুইভাগ করে রেখেছে এবং অবৈধভাবে গত ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় আকড়ে ধরে রেখেছে।
আওয়ামীলীগ আমলেই যে পরিমান হিন্দুদের উপর নির্যাতন হয়েছে তা আসলে কোন সরকার কখনোই করতে পারেনি। অনেকে বলে দেশ ভাগের সময়েও এইভাবে কোনো দেশে হিন্দু নির্যাতন হয়নি যতটা আওয়ামীলীগের আমলে হয়েছে। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে নাসির নগরে হিন্দু নির্যাতন, টিটু রায়কে ঘিরে হিন্দু নির্যাতন সহ অনেকগুলো ঘটনার ক্ষেত্রে সাক্ষী হয়েছি। আসলে মধ্য রাতের নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ব্যবহার করে যেহেতু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গিয়েছে সেখানে আসলে সাধারণ নাগরিকদের চাওয়া বা পাওয়ার তো হিসেব নেই ফলে হয়েছে কি আওয়ামীলীগ হয়ে উঠেছে বেপোরোয়া।
আমার এক খৃষ্ঠান বন্ধু জিনি একই সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যুক্তরাজ্যের সাথে জড়িত, জনি জোসেফ কস্তা, তাঁকে এই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘হাসিনা শুধু মুখেই বলে তার দল নাকি অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু বাংলাদেশের একজন সংখ্যালঘু পরিবারের একজন হবার কারনে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই আসলে আওয়ামীলীগের গুন্ডারাই সংখ্যালঘুদের সবচাইতে বেশী নির্যাতন করে। নাসির নগর সহ দেশে যেসব অঞ্চলে গত এক যুগ ধরে সংখ্যলঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছে তার প্রতিটির সাথেই আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান, মেম্বর, এম পি কিংবা কমিশনার। মূলত এটাই আওয়ামীলীগের এখনকার সত্যকারের চিত্র’
আসলে আমিও জোসেফের সাথে একমত না হয়ে পারিনা। উনার বলা কথাগুলোকেই সত্য বলে মনে হয়। আওয়ামীলীগ ধর্ম নিয়ে খেলা শুরু করে ৫-ই মে ২০১৩ সালে শফী হুজুরের লং মার্চের মধ্য দিয়ে। শফি হুজুর হচ্ছে হেফাজতী ইসলামের প্রধান। এই গোত্রটি কখনোই বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলো এমনটি শোনা যায়নি। হঠাৎ করেই শাহবাগের গণ আন্দোলনের সময় এই দলটির উদ্ভব এবং তারা হঠাৎ করেই ব্লগার, লেখক, মুক্তমনা ব্যাক্তিদের উপর চড়াও হয়ে মিডিয়াতে তাদের কতল করতে হবে, ফাঁসি দিতে হবে ইত্যাদি বলে আন্দোলন শুরু করলো। অথচ শাহবাগের আন্দোলনের সাথে ব্লগারদের কিংবা নাস্তিকতা বা আস্তিকতার কোন সম্পর্ক ছিলো না। এই আন্দোলন ছিলো একাত্তরের ঘাতক কাদের মোল্লার যাবজীবন কারাদন্ডে ক্ষুদ্ধ হয়ে ফাঁসি চেয়ে সাধারণ মানুষের আন্দোলন।
আওয়ামীলীগ একদিকে শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে ঢোল বাজিয়ে অন্যদিকে রাস্তায় ছেড়ে দিলো শফি হুজুর ও তাদের দলবলকে। রাজনীতির নামে ধর্মকে ব্যবহার, আল্লাহ-খোদা ইত্যাদি আজব ব্যাপার স্যাপারকে ব্যাবহার করে দুইদিকেই তাল দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করে ফেললো। সেই থেকেই এই হেহাফতের উত্থান। হাসিনা একসময় শফি হুজুরকে ‘তেতুল হুজুর’ বলে অভিধা দিলেও পরে যেন ইসলামের নবী মোহাম্মদের মত ট্রিট করা শুরু করতে লাগলো শফি হুজুরকে। যেন তাকে দিয়েই হাসিনা আওয়ামীলীগের ভার্সনের নতুন কোরান লেখার কাজ শুরু করতে চায়। পরে অবশ্য আমরা জানতে পেরেছি সরকারী ২০০ বিঘা জমি দেয়া হয়েছে শফিকে, কোটি কোটি টাকা দেয়া হয়েছে তার ছেলে আনিস মাদানী কে। এসবই হচ্ছে নতুন আওয়ামী ভার্সনের কোরান লেখার খরচ।
শুরুতে যা বলছিলাম মেজর সিনহা ইস্যু নিয়ে। মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে খুনী পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে এই হত্যাকান্ড সম্পন্ন করেছে যে আওয়ামীলীগ তাতে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। অনেকে বলছে সিনহা চায়নার হয়ে কাজ করছিলো আর ভারতের এতে খুব লাগে। কেননা কক্সবাজারে সিনহা প্রায় এক মাস ধরে যে ভিডিও মেইকিং এর কাজ করছিলোনা এটা মোটামুটি এখন সবাই নিশ্চিত। কেউ বলছে সিনহা চীনের এজেন্ট ছিলো আর তিনি সেখানে ভারতের বিরুদ্ধে কোন এক মিশনে ছিলেন। আর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র এর সাথে বাংলাদেশের পুলিশের ক্সবাজার শাখার এজেন্ট প্রদিপ ও লিয়াকত মিলেই এই খুন করেছে ভারতের নির্দেশে। এখন তো এসব সব তথ্য থলের বেড়ালের মত বেরিয়ে আসছে একের পর এক।
অবশ্য এতে করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে পুলিশের এক ধরনের টক্কর লেগে গেছে এবং এই ঘটনা এখনো চলমান। বাংলাদেশ পুলিশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে দূর্নীতিগ্রস্থ একটি সংস্থা।মানুষকে হত্যা, গুম, ছিনতাই সব এমন কোনো দূর্নীতি নেই যেটা বাংলাদেশের পুলিশ করেনা। এই সংস্থার প্রতি মানুষের আসলে কোনো আস্থাই আর জনতার নেই। এইন এই সংস্থা লেগেছে সেনাবাহিনীর পেছনে। এই স্পর্ধা তারা পেয়েছে ভারতের কাছ থেকে। কেননা বাংলাদেশের পুলিশ এখন হয়ে গেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র এর মূল এজেন্ট।
আমার বন্ধুর মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান তাঁর ব্লগে লিখেছেন কিছুদিন আগে, ‘সেনাবাহিনীর প্রধান আজিজ হচ্ছে এই বাহিনীর কলংক। একে যেমন ভারত কিনে নিয়েছে আওয়ামীলীগের পা চাটার জন্য তেমনি পুলিশের পুরো বাহিনীকেও ভারত কব্জা করে রেখেছে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কে দিয়ে। এইতো ২০০৯ সালে বি ডি আর বাহিনীতে প্রায় ৭০ এর উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের খুন করা হয়েছেই তো ভারতের নির্দেশে। এবং আমি জানিনা কেন এখনো সেনাবাহিনীর প্রাণ প্রিয় অফিসারেরা হাসিনাকে নির্মূল করে দিচ্ছে না। কিসের আশায় তাকে জিয়ে রেখেছে। হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশ যেমন একদিকে ভারতের এক অঙ্গ রাজ্য হয়ে উঠবে অন্যদিকে স্বাধীনতা আর সার্বভৌমতার কোনো লেশমাত্র থাকবে না। এই দেশটাতে আওয়ামীলীগ এক বিষফোঁঁড়ার নাম আর কিছুই নয়। আমি মনে করি একটা সঠিক বিপ্লবের মাধ্যমে এই দেশকে পুনরায় স্বাধীন করার সময় এসেছে। আমরা এই ব্যাপারে সকলেই চেষ্টা করছি। আশা করি আমরা সফল হব’
আমি তাঁর কথার সাথে পুরোপুরি একমত। বাংলাদেশ আর্মির কলঙ্ক হচ্ছে এই জেনারেল আজিজ। এই লোকটি পুরো সেনাবাহিনীকে আসলে অবশ করে রেখছে তার বাজে নেতৃত্ব দিয়ে এবং তার কারনেই আওয়ামীলীগ গত ইলেকশনে নৈশ ভোট চুরির মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে এবং এর-পরেই যেন তারা মনে করেছে এইবার ইচ্ছেমত লুটাপাট আর দূর্নীতি করা যাবে কেননা তাদের তো জনতার কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়না। এই দেশ এখন হয়ে গেছে একনায়কতান্ত্রিক এক দেশ। এখানে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই, এখানে মানবিকতা বা আইনের শাষন বলে কিছু নেই। এই দেশই একমাত্র দেশে যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতিকে রাতের আঁধারে অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে যেতে হয়েছিলো। ভাবা যায় এমন কথা?
এই দেশের পুলিশ বাহিনী হচ্ছে সবচাইতে বড় বদমাশ বাহিনী। চুরি-ডাকাতিতে তারাই এখন চ্যাম্পিয়ন। আর এখন এই সংস্থার প্রধান করা হয়েছে বেনজীর আহমেদ নামের এক ভারতের এজেন্টকে। যে কিনা বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য নানান কোয়ার্টার থেকেই অভিযুক্ত হয়ে রয়েছেন।
এইসব ব্যাপারে আমার দুই বন্ধু নুরুল হুদা ও এম ডি কানজিদ হাসানের বক্তব্যও আমি নেই এই ব্যাপারে তাঁদের মতামত কি জানবার জন্য,
বন্ধু নুরুল হুদা বলেন- “হাসিনা হচ্ছে ভারতের তাবেদার। এই দেশটাকে সে বেচে দিয়েছে ভারতের কাছে। হাসিনাকে তার বাবার মত নির্মূল না করতে পারলে এই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার”
একইভাবে বন্ধু এম ডি কানজিদ হাসান বলেন- ‘ আসলে আওয়ামীলীগ এই দেশে যে ক্ষত তৈরী করেছে সেটি এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। দেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশের মানুষ এক বিপ্লবের মাধ্যমে এখন যদি এই হাসিনা সরকারকে উৎখাত না করে তাহলে আসলেই সামনে বাংলাদেশের জন্য বেশ বাজে দিন অপেক্ষা করছে‘
এই করোনা প্যান্ডেমিকের সময় সরকারের স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতি সকল বিষ্ময়কে হার মানিয়েছে। এই ব্যাপারে এই নবযুগ পত্রিকার প্রকাশক আলি আমিন সাহেবের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলো, আমি সেটি এই লেখায় তুলে দিচ্ছি-
এই হচ্ছে দেশের প্রকৃত অবস্থা। আসলেই সত্য। করোনাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং তাদের গোপনে সমাহিত করা হয়েছে যাতে কেউ না জানতে পারে। সারাবিশ্বে যখন চলছে মহামারি করোনা আতংক ও এক ধরনের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব তখন বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে চুরি, লুন্ঠন,ডাকাতি আর লুট-পাটের সীমাহীন এক মচ্ছব। বাংলাদেশের এমন কোনো প্রত্যন্ত এলাকা নেই, গ্রাম বা মহকুমা নেই যেখানে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি বেপরোয়া দূর্নীতিতে নিমজ্জিত নেই।
এই হচ্ছে সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা। একদিকে আওয়ামী ভার্সনের নতুন নবী হয়েছে শেখ মুজিব। নতুন কোরা লেখা হচ্ছে শফি হুজুর নামের ভন্ডটাকে দিয়ে, পুলিশ বাহিনী হয়ে গিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্ট, করোনায় মরেছে লাখো মানুষ, গোপনে তাদের সমাহত করা হয়েছে আর সবার উপর দিয়ে চলছে ব্যংক লুট আর দেশের নানা খাতে ভয়াবহ দূর্নীতি।
ধর্ম আর রাজনীতিকে মিলিয়ে আওয়ামী কূট কৌশলের যেন আর শেষ নেই।