আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হতে যাচ্ছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। করোনা মহামারি প্রতিরোধে প্রস্তাবিত এডিপিতে এবারও স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে উত্পাদন বৃদ্ধি ও কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ অব্যাহত থাকছে। রবিবার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় খসড়া এডিপি চূড়ান্ত করা হয়। সূত্র জানায়, ঈদের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় খসড়া এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাবিত ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপির মধ্যে সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বা মোট এডিপির ৬১ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার ২৫ কোটি টাকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার ২০ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে এনইসি সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনে এডিপির আকার কিছুটা হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে। ঐ বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে নতুন এডিপির আকার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কমকর্তারা বলছেন, এডিপিতে মূল বরাদ্দের বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। উল্লেখ্য, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। সম্পদের সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষাপটে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে ধারণা করা হয়েছিল, উন্নয়নকাজে গতি আসবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়েনি, বরং আগের চেয়ে কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাস পার হলেও বাস্তবায়নের হার অর্ধেকও হয়নি। তারা জানান, মার্চে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কিছুটা গতি এলেও দ্বিতীয় দফা লকডাউন বা কড়াকড়ি আরোপের কারণে আবার তা থমকে গেছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। অর্থনীতিবিদেরাও বলেছেন, করোনা সংকটে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মনোযোগ দেওয়া। এর পাশাপাশি কৃষিপণ্য উত্পাদন বাড়াতে হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের এডিপিতে খাতভিত্তিক সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর পরে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা। রেলে ১৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
করোনার মহামারির মধ্যেও মেগা প্রকল্পে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নতুন অর্থবছর বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। এছাড়া মাতারবাড়ী বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্পে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।