রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির বাস্তবতা মোকাবিলা করে মূল্যস্টম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ।
গতকাল শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে তারা এ মত দেন। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়াতে পরবর্তী বাজেটে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন বক্তারা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো এবং আমাদের জনশক্তিকে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলব। আগামী বাজেটে আমাদের এ বিষয়ে আরও জার দিতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সারাবিশ্বের ৪০ ভাগ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ ইউক্রেন। কিন্তু চলমান যুদ্ধের কারণে গম, ভুট্টা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সেখানে কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেন না। সেজন্য আগামী ছয় মাস পর দেশের খাদ্য নিয়ে আমরা চিন্তায় রয়েছি।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের যুব সমাজ চারজনে একজন বেকার এবং শিক্ষিত যুবক তিনজনের মধ্যে একজন বেকার। যে যত শিক্ষিত সে তত বেকার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক স্থিতিশীল দেশ, আবার অনেক দেশ তিন মাসের মধ্যে অস্থিতিশীল হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা এখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। আমরা অক্টোবর থেকে বলেছি দেশে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। তখন কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বলা হচ্ছে বেকারত্ব বেড়েছে। কিন্তু গার্মেন্ট বা কারখানা পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, লোক পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। তবে আগামী বাজেটে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ মূল্যস্টম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের ৮০ ভাগই সাধারণ মানুষ। তাদের জন্য বাজেট কেমন করা হবে, সেটা ভাবা উচিত। সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট যেন জুলুম না হয়।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, গত ১০ বছরে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল থাকায় আমাদের উৎপাদন ও রপ্তানি বেড়েছে। নিরাপত্তা সংকট না থাকায় পোশাক খাতে বায়াররাও আসছে, আমাদের অর্ডার বেড়েছে। তবে গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার বলেন, পুরো ই-কমার্স খাতে যে কয়েকটি কোম্পানি দুর্নীতি করেছে, তারা দুই শতাংশেরও কম। কিন্তু করোনাকালে আমরা দেখেছি, কভিডকালে পুরো ই-কমার্স খাতে প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রায় চার লাখ উদ্যোক্তা কাজ করছেন, এর বেশিরভাগই নারী।
সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশির চেয়ারম্যান সেকিল চৌধুরী বলেন, প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষ দেশের বাইরে থাকেন। তাঁরা প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিবছর দেশে পাঠান। কিন্তু তাদের তৃণমূল পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত করা হয় না।