বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের আরও উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক। রোববার ঢাকায় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে তিনি এ কথা জানান। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ঢাকার কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের দূতাবাস ‘কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের সিএসআর কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শিরোনামে আলোচনা করে। রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্বিপক্ষীয় সেপা চুক্তি কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়াতে খুব উৎসাহ জোগাতে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে। তিনি আরও বলেন, এই চুক্তি থাকলে দুই দেশের সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে। তিনি জানান, উভয় দেশ কীভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রগতি করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতি, কৌশলগত অবস্থান এবং শ্রমশক্তির প্রবৃদ্ধি কোরিয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি, তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য সময়মত ভিসা প্রদান ও নবায়ন, শুল্ক ছাড়ের সুবিধা, কাঁচামাল ও মাঝারি পণ্যের উপর কর হ্রাস, প্রকল্প সম্পন্ন হলে ডলার পাঠানোর সমস্যা সমাধান এবং মুনাফা দেশে পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতি বছর বেড়েই চলছে, কিন্তু সীমিত পরিমাণে থাকায় সন্তোষজনক নয়। পাদুকা, আইসিটি পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, হালকা শিল্পপণ্য ও ওষুধের মতো পণ্য কোরিয়ায় আরো বেশি রপ্তানি করা সম্ভব। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক কল্যাণ এবং দায়িত্বশীল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিএসআর কার্যক্রমের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোরিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন। সেমিনারে বাংলাদেশে কর্মরত শীর্ষ কোরিয়ান কোম্পানির প্রতিনিধিরাও তাদের বিভিন্ন সিএসআর কার্যক্রম উপস্থাপন করেন, যেখানে এলজি ইলেকট্রনিক্স, স্যামসাং, উরি ব্যাংক, দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইয়ংওয়ান কোম্পানির নাম উল্লেখযোগ্য। তারা শিক্ষাতা, কমিউনিটি স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নিজেদের উদ্যোগের কথা জানান। সেমিনারে মূল কোরিয়ান এনজিও সংস্থা হিসেবে সেভ দ্য চিলড্রেন কোরিয়া, অক্সফাম কোরিয়া, হ্যাবিট্যাট কোরিয়া, গুড নেইবারস, এডিআরএ কোরিয়া এবং গ্লোবাল কেয়ার তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন। এই উদ্যোগগুলো বাংলাদেশে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নত করতে ও সামাজিক কল্যাণে অবদান রাখতে কাজ করছে। অনুষ্ঠান শেষে সিএসআর সেন্টার chairman এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান কথিত করেন, সুষ্ঠু ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরিতে সিএসআর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা আন্ত:বিশ্বাস, সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের ভিত্তি শক্তপোক্ত করে। এছাড়া, কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এবং ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান এবং কোইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর জিহুন কিমও তাঁদের বক্তব্য দেন।