বাংলাদেশে বৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির জন্য শুল্কহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের মোবাইল কলেকশনের খরচ কমানোর পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্য নতুন সুবিধা চালু করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের নেতৃত্বে গত ১ ডিসেম্বর সচিবালয়ে এক উচ্চস্তরের সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে: প্রবাসীরা দেশে ছুটি কাটানোর সময় ৬০ দিন পর্যন্ত স্মার্টফোন রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন পড়বে না; ৬০ দিনের বেশি থাকলে মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর পাশাপাশি, যাদের বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে, তারা তিনটি ফোন বিনামূল্যে দেশে আনতে পারবেন। অর্থাৎ, নিজের ব্যবহারের জন্য একটি ফোনের সঙ্গে আরও দুটো নতুন মোবাইল আনতে পারবেন তারা বিনামূল্যে, তবে চতুর্থ ফোনের জন্য ট্যাক্স দিতে হবে।
যেসব প্রবাসীর বিএমইটি কার্ড নেই, তারাও নিজের ব্যবহারের মোবাইল ও একটি অতিরিক্ত মোবাইল ফ্রিতে আনতে পারবেন। তবে এ জন্য মোবাইল ক্রয়ের বৈধ কাগজপত্র সাথে রাখা বাধ্যতামূলক। কারণ বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যে চোরাচালানিরা প্রবাসীদের চাপাচাপি করে স্বর্ণ ও দামী মোবাইল ফোনের শুল্কহীন পাচার চালাতে চেষ্টা করে। এজন্য মোবাইল কেনার কাগজপত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক বর্তমানে প্রায় ৬১ শতাংশ, যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সরকার কাজ শুরু করেছে। এর ফলে দেশের বাজারে বৈধ মোবাইলের দাম কমবে এবং মোবাইল উৎপাদনকারী ১৩ থেকে ১৪টি কারখানার শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে, শুল্ক কমালে বৈধ এবং অবৈধ, উভয় ধরনের মোবাইলের বাজার একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানির শুল্ক সমন্বয়, পাশাপাশি সুবিধাভোগীদের জন্য সেবা উন্নত করতে বিটিআরসি ও এনবিআর পরে পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। এ ছাড়া, কেউ যেন তার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অপরাধ মুক্ত রেজিস্ট্রেশনের জন্য ও চোরাচালান রোধে নিজ নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করতে হবে।
এদিকে, ক্লোন, চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল বন্ধ ও রিফারবিসড মোবাইল আমদানিও বন্ধ করা হবে। সম্প্রতি, ১৬ ডিসেম্বরের আগে অবৈধ আমদানি ও স্টকে থাকা সক্রিয় আইএমইআই নম্বরযুক্ত ফোনগুলো বৈধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে, ক্লোন ও রিফারবিসড মোবাইলের জন্য এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।
আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে ব্যবহৃত সক্রিয় মোবাইলের বন্ধ করা হবে না। এদিন থেকেই বন্ধ হচ্ছে নতুন এনইআইআর (National Equipment Identity Register) সেবা। ফলে, বৈধ আইএমইআই নম্বরবিহীন হ্যান্ডসেট ক্রয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ আমদানি, চোরাচালানকারী ও ক্লোন মোবাইলের বাজার দমন করা হবে।
পূর্বের বাজারে থাকা অবৈধ ও ডাম্পিং মোবাইল ফোনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে, ইলেকট্রনিক বর্জ্য হিসেবে অবৈধভাবে বাজারে আসা ফোনের কেসিং পরিবর্তনের মাধ্যমে চালানো চোরাকারবারি কারবার রোধ।
এছাড়া, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে ভারত, থাইল্যান্ড, চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলো তদারকি করে শনাক্ত করা হচ্ছে এবং কাস্টমসের মাধ্যমে আরও দ্রুত অভিযান চালানো হবে।
প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ (সংশোধনী), ২০২৫-এ মোবাইলের ইকেওয়াইসি ও আইএমইআই রেজিস্ট্রেশন ডেটার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন বিধানে রেজিস্ট্রেশন বা ডেটা সংক্রান্ত কোনও লঙ্ঘন হলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।






