মোবাইল ফোনের দাম কমিয়ে আনতে সরকার উভয় ক্ষেত্রেই কর ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর সদ্য নিযুক্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, দেশে আমদানিসহ উৎপাদনের ক্ষেত্রে করের বোঝা হালকা করতে আগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে মোবাইলের দাম কমে যায়। বর্তমানে দেশের বাজারে মোবাইলের দাম সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জing হয়ে দাঁড়িয়েছে, এ কারণে সরকার এই পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ব্যবসা সহজ করার জন্য আমদানি করের পরিবর্তে ভ্যাট ও আয়কর আদায়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি, অবৈধ মোবাইল আমদানির ঠেকা দিতে শুল্ক কমানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও ট্রেড থেকে চাপানো ট্যাক্সের পরিমাণ খুবই বেশি। আসলে এই করগুলো মূলত দেশের স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য। যেন আমাদের মোবাইল উৎপাদন ও আমদানিতে প্রয়োজনীয় প্রোতেকশন নিশ্চিত করা যায়। তিনি উল্লেখ করেন, আজকের দিনে মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারাররা বড় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন—তারা প্রশ্ন তুলছেন, যদি আমদানি শুল্ক কমানো হয়, তবে তাদের বিনিয়োগের দিকে কি হবে। কারণ আগামী দিনগুলোতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার) চালু হতে যাচ্ছে, যা দিয়ে অবৈধ মোবাইলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, সরকার উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করার পাশাপাশি কনজিউমারদের লাভের বিষয়ে খুবই সচেতন। তিনি জানান, মোবাইল ও স্মার্টফোনের দাম কমানোর জন্য সরকার কর ছাড়ের পক্ষে আছে এবং এজন্য দ্বিগুণই মনোযোগী হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিজয় দিবস থেকে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন বা এনইআইআর কার্যকর হচ্ছে। তবে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইলগুলো ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিক্রি হতে পারবে। এরপর আর বৈধ পথে আনা মোবাইলগুলো নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হবে না। বর্তমানে উচ্চ শুল্কের কারণে স্বল্পসংখ্যক বৈধ মোবাইল আমদানি হয় বলে দেশের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বেশিরভাগ হাই অ্যান্ড মোবাইল বাজারে অবৈধ মোবাইলের আধিপত্য থাকলেও, যদি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং আমদানি সংক্রান্ত কঠোর নিয়ম কার্যকর করা হয়, তবে সরকারের রেভিনিউও বাড়বে। তিনি বললেন, ফরমাল চ্যানেলে আসার ফলে সরকারের আয় বাড়ার পাশাপাশি বাজারের সুরক্ষাও বেড়ে যাবে।
অতিরিক্ত উচ্চ আমদানি শুল্কের প্রসঙ্গে তিনি আলট করে জানান, দেশে স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করার জন্য অনেক সময় শুল্ক বাড়ানো হয়। তবে এখন, পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে, স্মার্টফোনের উপর মোট কর হার ৬১.৮ শতাংশ, যার মধ্যে আমদানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অন্তর্ভুক্ত। উৎপাদন ও সংযোজনের ভিন্নতা অনুযায়ী এই সংখ্যান বিভিন্ন।
অবৈধ মোবাইলের ব্যবসা ও এনইআইআর প্রকল্পের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মোবাইল ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে, এই প্রকল্পের ফলে দখলদারিত্ব কমে যাবে, অবৈধ মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ হবে এবং পুরনো, অবৈধভাবে আমদানি হওয়া মোবাইলের বাজারও বন্ধ হবে। এর ফলে, বহুপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় অবৈধ মোবাইলের বিরুদ্ধে তিন মাসের জন্য কিছু শুল্ক ছাড় ঘোষণা করেছে। এর ফলে, সরকারের পুরো অর্থনীতির উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ আরো শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।






