গাজীপুরে তৈরি পোশাক শিল্পের পরিত্যক্ত ঝুট ও তুলা এক নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সূচনা করেছে। এই পরিত্যক্ত কাঁচামালগুলো বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে দেশে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণে অর্থ ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। দেশের নানা স্থানে রক্ষা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এই কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর মহানগর ও জেলার বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা থেকে দৈনিক প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টন পরিত্যক্ত ঝুট ও তুলা উৎপাদিত হচ্ছে। এই ঝুট ও তুলা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে শত শত ব্যবসায়ী এবং হাজার হাজার শ্রমিক। টঙ্গীর মিলবাজার, মাঝুখান, কালিয়াকৈর, আমবাগ এবং শ্রীপুরের মাওনা এলাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলেও এই পরিত্যক্ত কাঁচামালের বড় বাজার গড়ে উঠেছে। স্থানীয় পল্লী বাজারে এই ঝুট ও তুলার বিক্রয়-ক্রয় কার্যক্রম সারা বছর চলে।
গাজীপুরের মিলগেট ঝুট ও তুলার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবু সাকের জানায়, প্রতিদিন এখানে আনুমানিক ২ থেকে ৩ হাজার টন ঝুট ও তুলা কেনাবেচা হয়, যা দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিদেশেও রপ্তানি হয়। ভারত, চীন, তুরস্ক, হংকং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই কাঁচামালের রপ্তানি চলছে ব্যাপক হারে।
এ ছাড়া, ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের কিছু কারখানায় পরিত্যক্ত ঝুট থেকে ম্যাট্রেস, গাড়ির সিট, তোশক, বালিশ, কুশন, পুতুল, ডাস্টার, কার্পেট ব্যাকিং, শপিং ব্যাগ ও ফ্লোর ম্যাট সহ নানা ধরনের নিত্যপ্রয়াজনীয় পণ্য তৈরি হচ্ছে। একইভাবে, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে কম মূল্যের বিছানার চাদর, গামছা ও লুঙ্গি তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতেও শিপইয়ার্ড ও শিল্প কারখানায় ওয়াইন র্যাগের মত উচ্চমানের ঝুট প্রকৌশলে প্রস্তুত করছে।
এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে পরিত্যক্ত ঝুট ও তুলার রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার মূল গন্তব্য হচ্ছে ভারত, চীন, তুরস্ক, হংকং এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪১১.১২ মিলিয়ন টাকা।
ঝুট ব্যবসায়ীরা মনে করেন, গাজীপুর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। এ কারণেই এখানে উৎপন্ন পোশাকের বর্জ্য ও পরিত্যক্ত ঝুট-তুলার পরিমাণ বেশি। যদি স্থানীয়ভাবে আধুনিক রিসাইক্লিং প্রযুক্তি এবং কার্যকর বাজার ব্যবস্থা চালু হয়, তাহলে এই খাতে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন বা তারও বেশি ডলারের রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এই শিল্পের জন্য কিছু বড় চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। অপরিকল্পিত গুদামজাতকরণ, অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি, এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। যদি এই সব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে এনে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাজার মনোনয়ন করা যায়, তাহলে পরিত্যক্ত ঝুট ও তুলার খাত দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হবে।






