বিশ্ববাজারে চলতি বছর তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। শুক্রবারের বিকেলের কার্যদিবসের শেষ সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উভয়ই পতনের দিকে গিয়েছে। এই দাম পতনের পেছনে মূল কারণ হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে চর্চা ও আলোচনার অগ্রগতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে এই দাম কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকে ধ্রুব শান্তি ও যুদ্ধবিরতি সম্ভব হলে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ার সম্ভাবনাও জোরদার হবে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার ৬৪ সেন্টে এসে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ৫৬ ডলার ৭৪ সেন্টে নেমে এসেছে।
এদিকে, এই বছর মোটামুটি একটা বিস্ময়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে তেলের দাম চলতি বছরের মধ্যে অনেকটাই নিম্নগামী হয়েছে। বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায় এই দাম। এরপর কিছুটা বৃদ্ধি হলেও সামগ্রিকভাবে দেখে গেলে বোঝা যায়, এই বছর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৯ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআই এর দাম ২১ শতাংশ হারিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২০ সালের পর এই বছরই তেলের দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয় বিশ্ব অর্থনীতির ধীরগতিকে, যেখানে চাহিদা কমে গেছে। পাশাপাশি, অপরিশোধিত তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এসব কারণের কারণে তেল মূল্যের নিম্নগামী ধারা অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শান্ত হওয়ার আলোচনায় অগ্রগতি কবে হবে, সেটাই এখন বিনিয়োগকারীদের চোখের আড়ালে দেখা যাচ্ছে। যদি শান্তিচুক্তি কার্যকর হয়, তাহলে রাশিয়ার ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে, ফলে তেলের বাজারে সরবরাহ বাড়বে।
বৈঠকের খবর জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রোববার ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করবেন। জানা গেছে, শান্তির ২০ দফা প্রস্তাব ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা চলছে। জেলেনস্কি আরও জানিয়েছেন, নতুন বছরের আগেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব, এবং রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, তাহলে শান্তি চুক্তির বিষয়ে গণভোট-ও ডাকা হতে পারে।
আরেকদিকে, ক্রেমলিন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পাওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা এই বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, বৈশ্বিক তেল মজুত বৃদ্ধি ও ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় অঙ্গীকারের অগ্রগতি না হওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বছরে তেলের দামে সামান্য বা বাজে প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।






