ভোজ্য তেল আমদানিতে ভ্যাট মওকুফ করা হলেও এখনো অস্থিরতা কমেনি তেলের বাজারে। খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে সয়াবিন, পাম অয়েল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিলাররা যদি সরকার নির্ধারিত দরে সয়াবিন, পাম অয়েল বিক্রি না করে তাহলে তারা কীভাবে নির্ধারিত দরে তেল বিক্রি করতে পারবেন?
তারা জানান, সমস্যার গভীরে না গেলে সমাধান কখনোই আসবে না। গত কিছুদিন ধরে কোনো মিল থেকেই সরকার নির্ধারিত দরে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, মিলাররা চাহিদামতো তেল সরবরাহ করছে না। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তি, তাই মাল যত দিন আটকে রাখা যাবে, তত বেশি মুনাফা। এই কাজটি করছে কোম্পানিগুলো। এছাড়া ভোজ্য তেল কারখানাগুলোর প্রবেশমুখে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। আবার সেখানেও চাঁদাবাজি হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভোজ্য তেল কোম্পানিগুলো বলেছে, তারা সরকার নির্ধারিত দরেই ডিলারদের কাছে তেল বিক্রি করছে। এছাড়া এসও (ডিও) বুকিং দেওয়ার পর নিজেরা পণ্য বুঝে না নিয়ে অন্য ব্যবসায়ীর কাছে বেশি দামে তা বিক্রি করে দেন ডিলারা। এভাবে হাত বদলের কারণেই দাম বাড়ছে ভোজ্য তেলের।
গতকাল শনিবারও সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশিতে সয়াবিন, পাম অয়েল কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৮০ টাকা, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮২০ থেকে ৮৩০ টাকা, খোলা পাম অয়েল ১৫৮ থেকে ১৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন সর্বোচ্চ ১৬৮ টাকা, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৭৯৫ টাকা, খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ১৪৩ টাকা এবং খোলা পাম অয়েল প্রতি লিটার ১৩৩ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। আর মিলগেটে ডিলারদের জন্য প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৩৯ টাকা ও পাম অয়েল ১২৯ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু কোম্পানিগুলো এই দরে মিলগেটে সয়াবিন, পাম অয়েল বিক্রি করে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো বলেন, সরকার মিলগেটে সয়াবিন, পাম অয়েলের যে দর নির্ধারণ করেছে, আমরা তো সেই দরে তেল কিনতে পারি না। তাহলে আমরা কীভাবে সরকার নির্ধারিত দরে তেল বিক্রি করব? তাহলে তো আমাদের লোকসান দিতে হবে। তাই লোকসান ও জরিমানার ভয়ে আমরা গত দুই-তিন দিন হলো মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা করছি না। কারণ, সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে আমরা তেল কিনতে পারব না। বেশি দামে বিক্রিও করতে চাই না।
গত বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যালয়ে ভোজ্য তেল মিলমালিক এবং সরবরাহ পর্যায়ের সব স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকেও একই অভিযোগ করেন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবুল।
তিনি বলেন, মিলগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হোক যে, তারা গত এক মাসে যেসব পণ্য বিক্রি করেছে সেগুলো কত টাকা দরে বিক্রি করেছে। মূলত মিল পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দরে তেল বিক্রি না হওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে সব পর্যায়ে। এমনকি এসওতে কত টাকা দরে পণ্য বিক্রি করা হলো তা উল্লেখ করার নিয়ম থাকলেও মিল থেকে তা করা হয় না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
বৈঠকে সানভীর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী দিপু বলেন, কোম্পানিগুলোতে মালের জন্য গাড়ি পাঠালে ৮ থেকে ১০ দিন বসে থাকতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। খরচ বাড়লে তা তেলের দামের ওপরই প্রভাব পড়ে।
বৈঠকে টিকে গ্রুপের পরিচালক শাফিউল তসলিম বলেন, মিল থেকে মাল সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। গত তিন মাসে আমরা কী পরিমাণ তেল সরবরাহ করেছি সেই তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া আছে। আপনারা মিলিয়ে দেখেন। তিনি বলেন, অনেকে ১৫ দিন আগের ডিও নিয়ে আসে। আবার কেউ ২০ দিন আগের পুরোনো ডিও নিয়ে আসেন। তাহলে আমরা কাকে আগে দেব? সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত্ সাহা বলেন, গত তিন মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে ৫২ হাজার ২০০ টন ভোজ্য তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই।