বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থা সহজে ব্যবহারে দেশের মধ্যে পেপ্যালের মতো বিশ্বস্ত ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম আনতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোক্তারা এখন আরও আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন। ইতোমধ্যে পে-প্যালের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, যেখানে দেশে অনলাইনে কেনাকাটা ও পেমেন্টের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হলো বিদেশি বাজারে প্রবেশের জন্য একটি সহজ, অসংকোচহীন ও আধুনিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা নিজেদের পণ্য সহজে বিক্রি করতে পারেন।
বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আয়োজিত দুইদিনব্যাপী সম্মেলন ও কর্মশালায় উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গভর্নর আরও মন্তব্য করেন, শুধু উদ্যোক্তা বাড়ালেই হবে না, বরং চাহিদা বৃদ্ধি ও বাজার সৃষ্টি জরুরি। এর জন্য একাডেমিক ও ব্যবসায়িক স্তরে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে বিসিকের উদ্যোক্তাদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দিতে পারে, তবে তা আদায়যোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, উৎপাদন বাড়াতে ঋণের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন, কারণ বর্তমানে সরকারের ২৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা প্রাপ্তিতে ব্যাংকগুলো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। তিনি stressed করে বলেন, যদি ঋণের সঠিক ব্যবহার ও সম্পদ মুদ্রাদ্যুতির মাধ্যমে কার্যকরভাবে পুনঃঅর্থায়ন সম্ভব না হয়, তবে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন শ্লথ হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্রেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি পণ্য পৌঁছে দিতে একটি আধুনিক, নিয়মিত আপডেট করা প্ল্যাটফর্মের দরকার। এ জন্য দক্ষ আইটি কর্মীদের সাহায্যে এই প্ল্যাটফর্মের বহুমাত্রিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
গভর্নর আরও জানান, পেপ্যাল হচ্ছে এক বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, যা দিয়ে অনলাইন টাকা পাঠানো, গ্রহণ করা, বিল পরিশোধ এবং আন্তর্জাতিক কেনাকাটা করা যায় সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ।
অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য এই ধরনের প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলছেন, ক্ষুদ্রশিল্পের সম্ভাবনা অপরিসীম, তবে সঠিক নীতিমালা ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে সবকিছু পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সোলার শক্তির ব্যবহার এবং পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া গ্রিন সার্টিফিকেশন অর্জন সম্ভব নয়। যা বাংলাদেশি রপ্তানি খাতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
তিনি উল্লেখ করেন, ঋণ বিতরণে দুর্বলতা থাকলে বরাদ্দকৃত অর্থ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ঋণের সঠিক বিতরণ ও পুনঃপ্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাজার তৈরি ও চাহিদা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রতিটি উদ্যোক্তার জন্য আলাদা প্রোফাইল, শপিং কার্ড ও রিয়েল-টাইম তথ্য থাকা অপরিহার্য, যাতে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে প্রবেশ করতে পারেন। তিনি অনুরোধ করেন, দেশের ক্ষুদ্রশিল্পের জন্য পেপ্যালের মতো বিশ্বখ্যাত ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ব্যবহার আরও প্রসারিত করতে হবে।
অবশেষে, তিনি বলেন, চীনের পণ্য যেমন আমেরিকা থেকে কেনা যায়, তেমনি বাংলাদেশি জামদানি ও অন্য ক্ষুদ্রশিল্পের পণ্যও বিদেশে বসে কেনা সম্ভব, যদি সঠিক নীতিমালা ও পরিকল্পনা থাকুক। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।






