নভেম্বরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম। আজ বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এই তথ্য প্রকাশ করেছে, যা মোট চার মাস ধরে রপ্তানি আয় কমার ধারাকেই নির্দেশ করে।
জুলাই মাসের শক্তিশালী সূচনাপ্রাপ্তির পর, রপ্তানি খাতের গতি অচিরেই মন্থর হতে শুরু করে। আগস্টে প্রবৃদ্ধির হার কমে আসে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে, যা আগের বছরের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম। setembro মাসেও পতন অব্যাহত থাকে, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার পড়ে যায় ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে এই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে এরপর থেকে প্রতি মাসেই কমতে থাকায় নভেম্বরের ফলাফল এসে স্পষ্ট করেছে যে, দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এই ধারাবাহিক কমতির কারণে ধীরগতি হয়ে পড়েছে।
সার্বিক বিবেচনায়, অর্থবছরের শুরুর জোরালো গতি এখন চার মাস ধরে ধারাবাহিক পতনের মুখে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবি প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ০.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে এই সময়ের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি খুবই স্বল্প।
নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে দেশের প্রধান রপ্তানি বিভাগ পোশাক খাতে। ঐ মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। নিটওয়্যার খাতে আয় ছিল ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এবং ওভেন খাতে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যেখানে গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার ও ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।
পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে ২৪.৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫.৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও পতন লক্ষ্য করা গেছে, যেমন চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে, প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ এসব খাতের অর্থনীতি এখনও অস্থিতিশীল।
তবে সব বাজারে একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। কিছু গন্তব্যে Berdimuhamedow অনুযায়ী দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪.২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩.০৪ শতাংশ। সমানভাবে, উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যে চীনে রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে ২৩.৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১.৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১.৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০.৪৬ শতাংশ। এই পরিবর্তনগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় বেশই আশার আলো দেখাচ্ছে।
সার্বিক চিত্রটা দুমুখী। একদিকে প্রধান রপ্তানি খাতে পতন, অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা। তবে বড় প্রশ্ন হলো, কি এই বাজার বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং পোশাকসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতের মন্দাকে কাটিয়ে উঠতে পারবে কি? বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে সামনে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। মূল্যে চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা রপ্তানি খাতের জন্য বাড়তি ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।






