[ভিডিও কৃতজ্ঞতা- প্রকাশকঃ আলি আমিন]
সারাবিশ্বে যখন চলছে মহামারি করোনা আতংক ও এক ধরনের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব তখন বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে চুরি, লুন্ঠন,ডাকাতি আর লুট-পাটের সীমাহীন এক মচ্ছব। বাংলাদেশের এমন কোনো প্রত্যন্ত এলাকা নেই, গ্রাম বা মহকুমা নেই যেখানে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি বেপরোয়া দূর্নীতিতে নিমজ্জিত নেই।
আমাকে অনেকেই বলবেন যে আমি এক সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে অতোপ্রতভাবে যুক্ত ছিলাম এবং সেই আদর্শের-ই একজন বাহক। ফলে আমার কথাকে অনেকেই বাঁকা ভাবে দেখতে চাইবেন। কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না যে এক সময় আমি এই দলটির সাথে যুক্ত ছিলাম বলে এই পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এখন যা ঘটে যাচ্ছে সেটিকে সমর্থন করতে হবে। এইরকম অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে কথা না বললে রীতিমত উত্তর পুরুষে পাপ হবে।
যাই হোক, ফিরে আসি আলোচনায়। শুরুতেই এটি বলে নেয়া ভালো এই লেখাটি লিখতে গিয়ে পত্রিকার সম্পাদক, সহ সম্পাদক, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং প্রকাশক সকলেই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং আমার বক্তব্যটি জনতার কাছে পৌঁছে দেবার জন্য সাহায্য করেছেন। আমি তাঁদের সকলের কাছেি কৃতজ্ঞ।
এই করোনাকালীন সময়ে রাষ্ট্র তার দূর্নীতিটা করেছে তার সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে। পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, সরকারের বিভিন্ন স্তরের আমলা, চেয়ারম্যান, মেম্বার, সংসদ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও আওয়ামীলীগের সকল স্তরের নেতা-কর্মিরাই এই দূর্নীতিতে জড়িত ছিলো।
আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের চাল চুরির ঘটনা এমন স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলো যে সাধারণ জনতা েদেরকে গনপিটুনী পর্যন্ত দিতে বাধ্য হয়েছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে রিজেন্ট হাসপাতালের ভয়ানক প্রতারক মোহাম্মদ সাহেদের ভুয়া করোনা রিপোর্টের কাহিনী বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের সকল প্রান্তে। এই ছাড়াও জেকেজি নামক একটি হাসপাতালের পরিচাল্ক সাবরিনা আরিফ ও এম ডি আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই করোনার ভুয়া রিপোর্টের অভিযোগ এসেছে। যদিও অনেক নাটকের পর তারা গ্রেফতার হয়েছে কিন্তু যেহেতু এরা প্রত্যেকেই সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে এইসব অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলো এগুলো এখন সবাই জানে।
চিন্তা করা যায়? যে এমন একটি ভয়াবহ দূর্যোগের সময় পর্যন্ত তারা মানুষের রোগের পরীক্ষা করবে বলে সে পরীক্ষা করায়নি এবং মানুষকে মিথ্যে ও মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছে দিনের পরদিন। এই প্রতারক সাহেব আবার বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানালে আওয়ামীলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য হিসেবে টকশোতে অংশগ্রহন করতো। মানে দাঁড়ায় যে, পুরো আওয়ামীলীগকে সে রিপ্রেজেন্ট করে, এমনটাই কিন্তু এখানে প্রমাণিত হয়।
এই সাহেদকে আবার আশ্রয় দিয়েছে পুলিশের বেশ কিছু উর্ধ্বতন অফিসাররা। শাহেদ যখন কোনো পাওনাদারকে তার টর্চার সেলে নিয়ে অত্যাচার করত এবং সেইসব অত্যাচারিতরা যখন পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাতো তখন পুলিশ অফিসারেরা উলটো সেসব অত্যাচারিত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিত। কি ভয়ংকর একটা অবস্থা, চিন্তা করলেই হাত পা গুলিয়ে আসতে থাকে।
এই করোনাকালীন সময়ে মাস্ক কেলেংকারী, চাল কেলেংকারী, করোনা রিপোর্ট কেলেংকারী সব মিলিয়ে সাধারণ জনতা এখন অতিষ্ঠ। অনেকেই তো বলছেন যাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি এই সময়ে দেশের দায়িত্ব নিতে পারতো তাহলে হয়তো এই দেশটা বেঁচে যেতো। যাই হোক, আমি অবশ্য এই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-দখল নিয়ে এর বেশী কিছু মন্তব্য করতে চাইছিনা এই লেখায়। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। মানুষ এখন মুক্তি চায়।
এই করোনাকালীন সময়ে গার্মেন্টস গুলো খুলে দিয়ে আবার বাংলাদেশকে মহামারীর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। শ্রমিক নেতা বলে যেসব প্রাক্তন জাসদ নেতার নাম (বর্তমানে আওয়ামীলীগের এম পি, মন্ত্রী বা সাবেক মন্ত্রী) আসে, সেসব শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়। এই লোকগুলো কোনোদিন বাংলাদেশের কথা ভাবেনি। সব সময় ভেবে এসেছে নিজের কথা। সড়ক আন্দোলনেই দেখেছি এই ভয়াবহ লোকটির আসল মুখোশ। এই লোকটির মত এমন অনেক শ্রমিক নেতার কাছেও মনে হয় বাংলাদেশ জিম্মি।
এইতো কয়দিন আগে করোনার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের খাদ্যের যে খরচ সেখানে দেখতে পেলাম এতে করে নাকি সরকারের খরচ হয়েছে ২০ কোটি টাকা। একবেলা একটা ডিম আর একটা পরোটা কিংবা দুই কাপ চায়ের জন্য কিভাবে ২০ কোটি টাকার বিল হয় তা আসলেই আমরা জানিনা। মানুষের এই ভয়াবহ দূর্যোগের সময় এরা সকল ধরনের মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের আর আস্থা নেই এই সরকারের প্রতি। করোনার সময় মানুষ দেখেছে এই সরকার, এই সরকার প্রধানের সকল মিথ্যা কথা আর মিথ্যে আশ্বাসের নানাবিধ প্রতিযোগিতা।
আমাদের সরকার প্রধানের ভূমিকা আমার দৃষ্টিতে সন্তুষ্টির নয়। তিনি লাখ লাখ টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের নামে যে হাস্যকর কথা বার্তা বলেছেন সেখানের ফাঁক ধরেছে অনেকেই। স্বাস্থ্যবীমা কিংবা মৃত্যুর পরের এক কালীন অর্থের প্রতিশ্রুতি সব কিছু যেন এক মিথ্যা আশ্বাস। কেউ এখন আর এইসব মিথ্যে কথার ফুলঝুড়িতে বিশ্বাসী নয়। সবাই আসলে রীতিমত এই সরকারকে নিয়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত ও পরিশ্রান্ত। সকলেই চান একটু মুক্তি।
আমরা ভাবতেও পারিনা এই করোনাকালীন সময়ে মানুষের মৃত্যু নিয়েও মিথ্যাচার হয়েছে। এই নবযুক পত্রিকাতেও এসেছে যে বাংলাদেশে প্রায় লাখের উপর মানুষ এই কোভিড- এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে কিন্তু সরকারি হিসেবে এত কম দেখানো হয়েছে যাতে করে মানুষ মনে করে সব কিছু নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। আসলে কিছুই আর এখন নিয়ন্ত্রণে নেই।
এখন একটি ব্যাপার-আসলে আমাদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, যত দ্রুত এই সরকার বিদেয় হবে ততই সকলের জন্য মঙ্গল এবং তখনই এই দেশে নতুন সূর্য উঠবে।
[পত্রিকার প্রকাশক আলি আমিন সাহেবের একটা বক্তব্য ভিডিও আমি এই লেখায় তুলে ধরেছি প্রাসঙ্গিক বলেই]