রাজধানীর মিরপুর মাজার রোড হয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালের প্রধান সড়কের দুই পাশের ফুটপাতের দোকান থেকে মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয়। এর পাশাপাশি গাবতলী সিটি কলোনির অবৈধ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস লাইনের সংযোগ নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় চাঁদাবাজ গ্রুপের হাতে। এই চাঁদাবাজ গ্রুপটি সিটি কলোনির ৪০০ ঘর নিয়ন্ত্রণ করে। শাহআলী মাজারের সামনে সবজির পাইকারি আড়ত এবং আড়তে আসা সবজির ট্রাক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের হাতে মাসে তোলাবাজি হয় ১০ লাখ টাকা। নাবিল গ্রুপ ও ইসলাম গ্রুপের অন্তত শতাধিক মাস্তান-চাঁদাবাজ দিনে রাতে তোলাবাজিতে ব্যস্ত থাকে। এই তোলাবাজির ভাগবাটোয়ারা ও আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ নিয়েই শনিবার রাতে পিয়াল গ্রুপের শাহ আলমকে ইসলাম গ্রুপের সশস্ত্র ক্যাডাররা কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সৈয়দ আলী বাদী হয়ে দারুস সালাম থানায় ইসলাম গ্রুপের প্রধান মো. ইসলামসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত রোবার মামলা দায়েরের পর পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
দারুস সালাম থানার ওসি আমিনুল বাশার বলেন, মামলায় বাদী ১৪ জন আসামির নাম উল্লেখ করেছেন। তাদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান চলছে। এর পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের টিমও কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
নিহত শাহ আলমের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সৈয়দ আলী গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, যুবলীগের স্থানীয় একটি কমিটিতে আমার ছেলের নাম রয়েছে। তার ছেলেকে ইসলাম গ্রুপের ইসলামসহ ১৫-২০ জন কুপিয়ে হত্যা করেছে। ওদের চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেছিল আমার ছেলে। এর আগেও ইসলাম আমার ছেলেকে হুমকি দিয়েছিল।
নিহত শাহ আলম ছিলেন শাহআলী থানা এলাকার নাবিল গ্রুপের সদস্য। নাবিল খান এর আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে নাবিল খানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে শাহআলী থানাধীন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন গুদারাঘাটে র্যাবের ক্রসফায়ারে মিরপুরের দুর্ধর্ষ পিয়াল বাহিনীর প্রধান পিয়াল খুন নিহত হন। পিয়ালের ছোট ভাই হলেন নাবিল খান। মিরপুর মাজার রোড থেকে গাবতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ফুটপাতের দোকানের চাঁদাবাজি নাবিল খানের একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশের কাছে এই গ্রুপের চাঁদাবাজদের একটি তালিকাও রয়েছে। এরা হলেন-টোকাই ফারুক, অতুল, এনামুল, মাইনুদ্দীন, ইদ্রিস, মুন্না, মজিবর, আলমাস, জাফর, রাসেল ও রাজ্জাক।
মিরপুর শাহ আলী মাজারের সামনে লেগুনা স্ট্যান্ড, গাবতলী বেড়িবাঁধ, গাবতলী সংযোগ সড়কসহ মোট ৬টি লেগুনা স্ট্যান্ড রয়েছে। এই ৬ টি স্ট্যান্ডে প্রতিদিন ২০০’ টি লেগুনা চলে। প্রতিটি লেগুনাকে দিনে ১ হাজার ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে নাবিল গ্রুপের পাশাপাশি ইসলাম গ্রুপও চাঁদাবাজি করে।
শাহ আলম খুনের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় এক নম্বর আসামি হলেন মো. ইসলাম। তিনি দারুস সালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন। এক সময় শাহ আলী মাজারের সামনে পাইকারি সবজির আড়তে রিকশা ভ্যান চালাতেন ইসলাম। পরে স্থানীয় ওয়ার্ড পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি কমিটি নাম ঠাঁই পাওয়ার পর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি দারুস সালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হন। পরে তার চাঁদাবাজির কর্মকাণ্ডের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। নিজের নামে ইসলাম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। এলাকার নির্মাণাধীন বাড়ি বা ভবনের ইট, বালু ও সিমেন্ট সরবরাহের কাজটি ইসলাম গ্রুপের হাতে।
শাহ আলম থানা পুলিশের খাতায় তার গ্রুপের যেসব চাঁদাবাজদের নাম রয়েছে তারা হলেন-গোলাপ, শেখ সুমন, লিমন, খোকন ও শান্তসহ ৩০ জন। এই গ্রুপটি শাহআলী মাজারের সামনে রাতে সবজির প্রতিটি ট্রাক থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদাবাজি করে। মাজার রোডে খুচরা সবজি বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদাবাজি করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইসলাম গ্রুপ ও নাবিল গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে মাজার রোডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে এরা প্রকাশ্যে চাঁদা তোলে। দুই গ্রুপ মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে। ছোট ছোট গ্রুপ দিয়ে এসব চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে এই দুই গ্রুপ। এদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয় না।